বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ
  • সরকারের প্রচেষ্টা হচ্ছে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সমুন্নত রাখা
  • সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা
  • রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার হাইকোর্টের রায় ৮ মে
  • বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • সরকারি চাকরিজীবীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন
  • ঢাকার বাতাস আজ খুব অস্বাস্থ্যকর
  • স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর কারিগরি শিক্ষা হবে মূল বিষয়
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

ঢাকার বায়ুমানের অবনতি থামছে না, বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত:
১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৮

রাজধানী ঢাকার বাতাস দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কোনোভাবেই থামছে না বায়ুমানের অবনতি। প্রায়ই বিশ্বের বায়ুদূষণের তালিকায় ১০০টি শহরের মধ্যে শীর্ষে থাকছে ঢাকা। ওই তালিকায় কখনো ঢাকার বাতাস ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ আবার কখনো ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ দেখাচ্ছে।

দূষণ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ ছিল গত ডিসেম্বরে। এ সময়ে একদিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, বায়ু দূষণের ফলে মানুষের বহুবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এর মধ্যে অন্যতম হার্ট অ্যাটাক।

বায়ু দূষণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তনালির ক্ষতি, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অনিয়মিত হার্টের ছন্দ এবং ধমনি শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশেষ করে বাতাসে উপস্থিত পিএম ২.৫ কণাগুলোর উচ্চমাত্রা হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষুদ্র কণাগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং সঠিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা সৃষ্টি করে।

ক্যাপসের গবেষণায় দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে বায়ুর গড় মান ছিল ২৮৮।

২০১৬ সালের পর থেকে বায়ুর মান এত খারাপ কখনোই হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বায়ুর মান ছিল ১৯৫। গত ৯ বছরে ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২১৯ দশমিক ৫৪। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ মান ৩১ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। আর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৬ শতাংশেরও বেশি।

বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে গতকাল সোমবার সকালে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আইকিউ এয়ারের মান সূচকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৫২। বায়ুর এ মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এদিকে আজ (১৪ জানুয়ারি) মঙ্গলবারও ঢাকার বায়ু ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। বায়ুদূষণের তালিকায় সকাল ৯টায় ২৩৯ স্কোর নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে শহরটি। আইকিউ এয়ারের সূচকে বলা হয়েছে, আজ ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) এর পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ৩২.৮ গুণ বেশি রয়েছে।

এদিন ঢাকার সবচেয়ে দূষিত বাতাস বিরাজ করছে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় (২৮৬)। তালিকায় এর পরে রয়েছে যথাক্রমে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এলাকা (২৮৩), সাভারের হেমায়েতপুর (২৮০), আগাখান একাডেমী (২৬৭), কল্যাণপুর (২৬২), গুলশান লেক পার্ক (২৩৯), তেজগাঁওয়ের শান্তা টাওয়ার এলাকা (২৩৯), পশ্চিম নাখালপাড়া সড়ক (২৩৬), গুলশানের গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এলাকা (২২৬), গোঁড়ান (২২০)। এসব এলাকায় বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের একিউআই স্কোরে শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্কোর মাঝারি, সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ এবং ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ স্কোর ৩০০ ওপরে থাকা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।

বায়ু দূষণে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রসঙ্গে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, বায়ু দূষণের ফলে বায়ুতে যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকার কথা সেটা থাকে না। দূষিত বায়ুতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান থাকে। দূষিত বাতাসের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান রক্তনালির লেয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে বায়ু দূষিত থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি থাকে।

তিনি বলেন, হৃৎপিণ্ডের যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন বায়ু দূষিত এবং বিষাক্ত থাকার ফলে সেই পরিমাণ অক্সিজেন হৃৎপিণ্ড পাচ্ছে না। ফলে রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখান থেকে হার্টের ব্লকসহ বিভিন্ন রোগ হচ্ছে, ফুসফুস থেকে ঠিকমতো অক্সিজেন সাপ্লাই হচ্ছে না। পাশাপাশি বাতাসে ধুলাবালি এবং বিষাক্ত উপাদান থাকার ফলে ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা এ জাতীয় সমস্যা তৈরি হওয়ার ফলে অক্সিজেনেশন ঠিক মতো হয় না। স্বাভাবিক নির্মল বায়ু থেকে হৃৎপিণ্ড যে পরিমাণ অক্সিজেন পাওয়ার কথা দূষিত বায়ুতে সেই পরিমাণ অক্সিজেন পাচ্ছে না। ফলে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বায়ু দূষণের জন্য পরোক্ষভাবে যে কারণগুলো দায়ী সেগুলোর কারণেও হৃদরোগ হচ্ছে। যেমন- রাজধানীতে অনবরত ভারী যানবাহন চলাচল, বিভিন্ন কনস্ট্রাকশনের কাজ, গাড়ির উচ্চ শব্দ বা হর্ন, এসবের ফলে মানুষের ওপর সাইকোলজিক্যাল প্রেসার পড়ছে, মানসিক অশান্তি এবং অস্থিরতা বাড়ছে। ফলে মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। এসবের প্রভাব পড়ে আবার হৃৎপিণ্ডে। ফলে বায়ু দূষণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুটি কারণেই হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর