বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ
  • সরকারের প্রচেষ্টা হচ্ছে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সমুন্নত রাখা
  • সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা
  • রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার হাইকোর্টের রায় ৮ মে
  • বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • সরকারি চাকরিজীবীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন
  • ঢাকার বাতাস আজ খুব অস্বাস্থ্যকর
  • স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর কারিগরি শিক্ষা হবে মূল বিষয়
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

এবার ভিনফিউচার স্পেশাল প্রাইজ পেলেন বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত:
৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:১৮

কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে সেই টিকা সহজলভ্য করে লাখো মানুষের প্রাণ রক্ষার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য কর্মদক্ষতায় বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে সম্মান এনে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এই জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। এবার তিনি পেলেন ভিয়েতনামের ভিনফিউচার স্পেশাল প্রাইজ।

কলেরা, টাইফয়েড এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) সুলভ মূল্যের টিকা উদ্ভাবনে অবদান রাখার জন্য বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরীকে ভিনফিউচার স্পেশাল প্রাইজ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের হো গুওম অপেরা হাউসে ভিনফিউচারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন, ভিন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ভিনফিউচার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ফাম নাট ভুওংসহ ভিন গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভিনফিউচার পুরস্কার দুটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়। একটি গ্র্যান্ড প্রাইজ, আরেকটি স্পেশাল প্রাইজ। ২০২৪ সালে বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশ ও ভূখণ্ডের প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে এ দুই ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়। চলতি বছর ভিনফিউচার পুরস্কারের বিষয়বস্তু ছিল ‘রিজিলিয়েন্ট রিবাউন্ড’ বা অদম্য ঘুরে দাঁড়ায়। ফেরদৌসী কাদরীর কাজে এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

পুরস্কার গ্রহণের সময় দেওয়া বক্তৃতায় ফেরদৌসী কাদরী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবন বিভাগে ভিনফিউচার পুরস্কার পাওয়ায় আমি গভীরভাবে সম্মানিত বোধ করছি। চার দশক ধরে আমি সংক্রামক রোগ, বিশেষ করে কলেরা, টাইফয়েড এবং এইচপিভির টিকা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে উদ্ভাবনের কাজে মনোনিবেশ করেছি। শিশু ও নারীদের জন্য এটা বিশেষভাবে কাজে লেগেছে।’

ফেরদৌসী কাদরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যাবিভাগ থেকে ১৯৭৫ সালে বিএসসি ও ১৯৭৭ সালে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর চিকিৎসা গবেষণায় পারদর্শী হয়ে উঠতে তিনি যুক্তরাজ্যে যান জৈব রসায়ন নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে। ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন/প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর আইসিডিডিআর,বির প্রতিষেধক বিদ্যা বিভাগ থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা শেষ করার পর তিনি একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৮৮ সালে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং মিউকোসাল ইমিউনলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।

ড. ফেরদৌসী কাদরী বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য। তার গবেষণার প্রধান বিষয় হলো অন্ত্রের রোগ। বিশেষ করে ইমিউনলজি, জিনোমিক্স,প্রোটোমিক প্রযুক্তি এবং ডায়াগনস্টিকস এবং ভ্যাকসিনে উন্নতি সাধন।

তিনি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন ধরনের সস্তা কলেরা টিকা উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি ব্যয়বহুল ‘ডকোরাল’ টিকার পরিবর্তে ‘শানকল’ নামক একটি টিকা ঢাকায় ব্যবহার করে সফলতা লাভ করেন। পরবর্তীতে টিকাটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

২০০৮ সালে ফিরদৌসী কাদরী বাংলাদেশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হন। তিনি ২০০২ সালে উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক আন্ত্রিকরোগ গবেষণার জন্য ক্রিস্টোফ মেরিএউক্স পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির বার্ষিক সিএনরাও পুরস্কার পান। জাতিসংঘের প্রস্তাবিতএকটি প্রযুক্তি ব্যাংক এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সাপোর্টিং ব্যবস্থাসমূহ সাংগঠনিকভাবে আরও কর্মক্ষম করে তুলতে ২০১৪ সালে তাকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্যানেলের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের সংক্রামক রোগ চিহ্নিতকরণ ও বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার রোধে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম এবং টিকাদান কর্মসূচি জোরদারে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে তিনি ‘লরিয়েল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ (এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল) লাভ করেন। ২০১৩ সালে অনন্যা শীর্ষ ১০ পুরস্কার পান। এরপর তিনি র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন ২০২১ সালে। এছাড়া ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে সরকার তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর