বুধবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩২ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল nagorikdesk@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ
  • সরকারের প্রচেষ্টা হচ্ছে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সমুন্নত রাখা
  • সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা
  • রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার হাইকোর্টের রায় ৮ মে
  • বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • সরকারি চাকরিজীবীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন
  • ঢাকার বাতাস আজ খুব অস্বাস্থ্যকর
  • স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর কারিগরি শিক্ষা হবে মূল বিষয়
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মুক্তমত

“কিরে কাল পরীক্ষা নাকি!”

ইবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৪৯

চট করে যদি প্রশ্ন করা হয়- বই পড়ার প্রতি এত অনীহা কেন? পণ্ডিত মশাই তড়িঘড়ির বাহানা না দিয়ে ঠিক এভাবে তালিকা করতে বসতো যে- ‘মানসিক অস্থিরতা, মোবাইল কিংবা ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, "পড়ে কী লাভ" এই ধরনের মেন্টালিটি, উদাসীনতা, বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া, কোনো টার্গেট না থাকা, খাওয়া দাওয়া আর ঘুমে ব্যাঘাত, খেলাধুলা ও ভিডিও গেম আসক্ত, প্রযুক্তির কারণে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মোহ, আর্থিক দৈন্যতা, মেধার যথার্থই মূল্যায়ন না করা, জ্ঞানী-গুণীর প্রতি শ্রদ্ধা না করা ব্লা ব্লা...।

বাস্তবতা কি তাই? বাস্তব জীবনের সাথে পাঠ্যপুস্তকের বিশাল ফারাক থাকায় পাঠ্যপুস্তক পড়াকালীন সময়েই অনেকের বইয়ের প্রতি অনীহা চলে আসে। যাদের টুকটাক পড়াশোনা করবার ইচ্ছে থাকে, তাদের গ্রাজুয়েশন শেষে মধ্যবিত্ত পরিবারের চাপে আয়ের মাধ্যম খোঁজার টেনশানে পড়ার মতো স্থির মানসিকতা তেমন একটা থাকে না। জাতিগত দিক থেকেই আমরা বেশ অধৈর্য। বই পড়ার অভ্যেস তৈরি করতে যতটুকু ধৈর্য দরকার, তা অনেকের মাঝেই গড়ে ওঠে না।

এসব প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে মনকে সাই দিতে যারা একটু পড়তে বসে আমরা তাদের একঘেয়ে বা অপরাধী তকমা দিতে দ্বিধা করি না। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জীবনের ইতিবৃত্ত টানতে গিয়ে নানানরকম হেস্তনেস্তের শিকার প্রতিটি শিক্ষার্থী। আপনি সিস্টেম বলুন বা প্রথা বলুন সংখ্যাটা আবাসিক শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক বেশি। হেস্তনেস্ত বললে বেশি হবে না। তাহলে কিভাবে সম্ভব?

আমরা বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের বইমুখী করতে পারছি না শুধু ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অন্তর্জালের কারণে। ডিজিটাল স্ক্রিনের সংস্পর্শে থেকে তাদের মস্তিষ্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের আজ মস্তিষ্ক থেকেও যেন নেই! কান থেকেও যেন নেই। কারণ, চারপাশের শব্দ তার কানে যায় না। চোখের ক্ষমতাও কমছে দিন দিন। এভাবে বিবর্তিত হতে হতে হাজার বছর পরের ভবিষ্যত মানুষের মস্তিষ্কের গঠন কেমন হবে, ভাবতে গেলেও অসহায় লাগে। সামনে যে ভয়ঙ্কর বিপদ অপেক্ষা করছে সে-ব্যাপারে এই জাতি এখনও অবচেতন।

পড়াশোনা প্রতি অনীহা না, বরং এক আত্মঘাতী আতঙ্কই আজকের প্রসঙ্গ। বইপোকা উপাধি নিয়ে ক্লাস, লাইব্রেরি, রিডিং রুম কিংবা নিজের রুমে পড়াশোনা করার আগে ১০ বার চিন্তা করতে হয়। কারণ কেন জানেন? পাছে লোকে কিছু বলবে ভেবে। তাহলে আমরা কিভাবে পড়ুয়া হবো? দোষটা আসলেই কার? পড়ুয়াদের না তৃতীয় পক্ষ!_ আপনি আমি যখন একটু পড়তে বসি বা বইপুস্তক হাতে অথবা ব্যাগে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করি তখন কী হয়? একটু ভেবে দেখেছি? ঠিক অমোঘ আত্মঘাতী এক কটুক্তিমূলক বা ব্যঙ্গাত্মক চিরায়ত বাণী শুনতে হয়- “কিরে কাল পরীক্ষা নাকি?”

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজ ছিল পড়াশোনা করা বা গবেষণা নিয়ে পড়ে থাকা। বই হাতে বা পড়ার টেবিলে দেখলেই কেন জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে কাল পরীক্ষা আছে কিনা! পরীক্ষার আগেই পড়াশোনা করা কি প্রথা হয়ে গেলো? অন্য সময় পড়াশোনার ট্রেন্ড হারিয়ে গেলো কেন? বিষয়টা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো যে পরীক্ষা ছাড়া পড়তে বসা যেন ফাঁসির কাঠগড়ায় দণ্ডয়মান কিংবা একেকজন মানসিক বিকারগ্রস্থ ব্যক্তি। এভাবে চলতে থাকলে পড়ুয়া তৈরি হবে কিভাবে? আজকে হাজারো প্রশ্ন রেখে গেলাম, যদিও সবকটা অরণ্যে রোদন। আমি জানি এর সমাধান পাওয়া সহজ না। এতটাই সহজ না। কিন্তু নিজে না পড়ে অন্যকে হেয় করা বা একটা প্রথা প্রতিষ্ঠা করা কতটুকু যৌক্তিক? একটু বের হয়ে আসা যায় কি??

একটা সময়ে সব পেশার মানুষ কম-বেশি বইয়ের ভুবনে ডুবুরির মতো ডুবে থাকতেন। যান্ত্রিক সভ্যতার এই যুগে এখন তেমন কেউ আর বই পড়তে চান না। বিশেষ করে রাজনীতিকরা প্রচুর বই পড়তেন। আইনজীবী, সাংবাদিক, সংসদ সদস্য, শিক্ষকরা প্রচুর বই পড়তেন। গবেষণা করতেন। তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল।

আর বর্তমানে রাজনীতিবীদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, সংসদ সদস্য, শিক্ষকরা সব চোর-বাটপার, ঘুষখোর, টাকা পাচারকারী। এরা আর যাই পড়ুক বই পড়ে না। পেপার পড়ে মাঝে মাঝে। এদের মাঝে শুধু টাকা আর ক্ষমতার লোভ। তবে লোক দেখানোর জন্য এরা কিছু বিখ্যাত বই তাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখে। তবে পড়ে না। বই পড়া তাদের কাছে সময়ের অপচয়।

আরবীয় পণ্ডিতগণের বক্তব্য শেষ হয় এই বলে যে 'অতএব সপ্রমাণ হল জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।' বাঙালী সাহিত্যিক মুজতবা আলীর বই কেনা গল্পের উপসংহারে বলেছেন -" প্রকৃত মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক যোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করে।"

আমার কাছে বই পড়া আর বই কেনা দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ শখ এবং কাজ বলে মনে হয়। আমার যতটুকু অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে তার ৮০ শতাংশ ব্যবহার করি বই কেনায়। এবং নতুন প্রজন্মকে বই উপহার দেয়ার মাধ্যমে বই পড়ায় উৎসাহিত করার চেষ্টা করি। আমার এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে আজীবন।

আমি দুনিয়াকে চিৎকার করতে অবিরত বলে যাব, বই পড়া আর বই কেনা হোক বর্তমান প্রজন্মের প্রিয় শখ। বই হোক আমাদের আত্মার খাবার। বইয়ের আলাপ ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের অন্তরে অন্তরে। পড়ুয়া বন্ধুদের উৎসাহিত করি। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আজ থেকে বর্জন করতে পারি কিনা ‘কিরে কাল পরীক্ষা নাকি?’ নামক হিংসাত্মক বাণী।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ শরীফ নামের এক বন্ধু জানান, যখন পড়তে বসি কিংবা বইখাতা নিয়ে বাহির হই তখন কানে আসে কমন বাক্য ‘কিরে কাল পরীক্ষা নাকি!’ এসব শুনলেই গাঁ আতকে উঠে। নিজেকে মনে হয় যেন গেরস্তের ফসল চুরি করা আসামী অথবা আমাকে পাগলা গারদে ভর্তি করার উপযুক্ত সময়। মনে হয় যেন অনেক বড় ক্রাইমের সাথে জড়িত। আবার সাথে মেলে নানানরকম ট্যাগ। এমনটাই কি হবার ছিল? নাকি প্রয়োজন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করা, জ্ঞানের সমুদ্রের আমরা যে সন্ধান পাই, তা থেকে নিজেকে অলঙ্কৃত করা। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে কই? যখন বিপরীতে প্রশ্ন আসে ‘কিরে কাল পরীক্ষা নাকি?’_হারিয়ে যায় স্পৃহা, ইচ্ছা, মনোযোগ, নিজেকে তখন মুড়িয়ে নিই আলসতার চাদরে। ইন্টারনেট চালু করে মুঠোফোন নামক জেলখানায় বন্দী হয়ে যাই । সময় গুলো স্ক্রলিং এ ফুরিয়ে যায়, শুরু হয় নতুন আরেকটি দিনের, কিন্তু রয়ে যার এর পুনরাবৃত্তি।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর